মুদ্রারাক্ষস/তৌহিদুল ইসলাম

মুদ্রারাক্ষস

তৌহিদুল ইসলাম

-কোন কর্মে লিপ্ত নাই।
কে যেন কাহাকে বলে- শীতল নিদ্রা ভাঙ্গো।

মুদ্রিত দৃশ্যেরা কেড়ে নেয় শিল্পকাতর চোখ,
গান শুনে শুনে সারাদিন কান ঝালাপালা করে!

-মুদ্রার অক্ষরে তুমি ল্যাখো মস্ত কবিতা,
আর তাদের ভাঙ্গিয়ে খেতে থাকো।

Posted in তৌহিদুল ইসলাম | Tagged , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

পোশাক/অভিজিৎ দাস

পোশাক

অভিজিৎ দাস

সেলাই মেশিন ছুটছে তুমুল গতি
লজ্জারা যত লুকোচ্ছে এসে
পোশাকের আবডালে
তোমার কণ্ঠে এনে দিতে পরিমিতি
রাষ্ট্র নেমেছে; আধপেটে বাঁচো
কোনোমতে চালেডালে

সকালে এসেছ, রাত হলে হবে ছুটি
ক্যারিয়ার ভরা টিফিন ছিল যা সাথে
তাই ভাগ করে কোনোমতে ডাল-রুটি
‘কাজে হাত লাগা…চুপ যা ! হাড়হাভাতে’…
তবুও এমন কারখানাতেই তুমি
দিন আনো- রাতে খেতে পাওনাতো রোজ
শিশুর কপালে পোড়াচাঁদ যায় চুমি
সাহেবের ঘরে পার্টি, পানীয়, ভোজ !

Posted in অভিজিৎ দাস | Tagged , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

মিশরের বিপ্লব ও কবিতা/ এলিয়ট কোলা

ছন্দোময় শ্লোগানে মুখর মিশরের জনতা

 

মিশরের সাম্প্রতিক বিপ্লবের প্রেক্ষিতে এই লেখাটি লেখেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারাবিক অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এলিয়ট কোলা। মিশরের সংস্কৃতি নিয়ে এলিয়ট কোলা দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দ্য ইনডাইপেন্ডেন্ট’-এ কোলার এই লেখাটি প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে লেখাটি অনুবাদ করা হলো ‘এক টাকায় কবিতা’-র জন্য।

মিশরের মানুষ যেভাবে মোবারকের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে তার দুর্বৃত্ত-শাসনের পতন ঘটাল তা ভীষণ আশাপ্রদ। বিশেষ করে এটা ভাবতে ভালো লাগে—বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক সংঘ এবং সিভিল সোসাইটি যে আন্দোলন চালিয়েছে, তা একটা চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে এল।

পাশাপাশি কবিতাও এই আন্দোলনে যে ভূমিকা রেখেছে তা কম আশ্চর্যজনক নয়। শ্লোগান এবং পোস্টারের ভাষা ছিল ছন্দোময়। এগুলো ছিল তীব্র এবং তীক্ষ্ণ। বেন আলি তিউনিস ছেড়ে পালানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিশরের আন্দোলনের ‘দিওয়ান’ লেখা হয়ে গেল। যেমন, ‘ইয়া মুবারাক! ইয়া মুবারাক! ইসসাউদিয়া ফিনিৎযারাক’! এর মানে হলো, মোবারক, ও মোবারক, সৌদি আরব তোমার অপেক্ষায়! রাস্তাজুড়েও ছিল নানান পঙক্তি। তাদের মধ্যে কিছু ছিল তিতকুটে—‘শুরতাত মাসর, ইয়া শুরতাত মাসর, ইনতু বায়াতু কিলাব আলআসর। অর্থ—মিশরের পুলিশ, হে মিশরের পুলিশ, তুই হয়ে গেছিস প্রাসাদের পোষা কুকুর। কিছু কবিতা ছিল প্রতিরোধী। যেমন, ‘ইদরাব ইদরাব ইয়া হাবিব, মাহমা তাদরাব মিশ হানসিব!’ মানে, আমাদের মারো, পেটাও, ও হাবিব (হবিব আলআদলি, সদ্যবিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), যত খুশি মারো—আমরা এখান থেকে নড়ছি না। এই যুগলটা খুব বুদ্ধিদীপ্ত। কারণ এরকম একটা প্রাচীন মিশরীয় লোককথা আছে। ‘দারব আলহাবিব যাঈ আকল আলযাবিব’(ভালোবাসার মানুষের মুষ্টি কিসমিসের চেয়েও মধুর)

কবিতা এই অভ্যুত্থানের অলঙ্কার নয়, এটা এই আন্দোলনের আবহসঙ্গীত। এই আন্দোলনের একটা বড় অংশ কবিতায় রচিত।

বিপ্লবের সময় কবিতার এ ধরনের ভূমিকা নতুন নয়। বিপ্লবও মিশরীয়দের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। আধুনিক যুগে মিশরীয়রা কমসে কম তিনটি আন্দোলন ঘটিয়েছে। ১৮৮১ সালের উরাবি আন্দোলন একটি দুর্নীতিগ্রস্থ অত্যাচারী রাজকে উপড়ে ফেলেছিল। ১৯১৯এর আন্দোলন ব্রিটিশরাজকে প্রায় হটিয়েই দিয়েছিল। ১৯৫২ সালের আন্দোলন নাসের, সাদাত এবং মোবারকের ৬০ বছরব্যাপী একনায়কতন্ত্রের উদ্বোধন ঘটিয়েছিল।

১৯১৯ সালের আন্দোলনটি কোনো আফ্রিকান দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বিদেশী সৈন্যবাহিনীর আক্রমণে সরকারটি নস্যাৎ হয়। এর পরম্পরায় বৃটিশরা মিশরে ৭০ বছর ধরে এক পরাক্রমী রক্তপায়ী শাসন জারি রাখে। ১৯১৯এর বিদ্রোহের ভিত্তি মজবুতই ছিল। এটি ছিল মূলত বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গণতন্ত্রমনা কর্মীদের নেতৃত্বে একটি জনপ্রিয় আন্দোলন। যদিও বৃটিশরা এটি বর্বরভাবে দমিয়েছিল, তবুও এই আন্দোলনের ফলাফল হিসাবে বৃটিশরা কিছু ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছিল।

তৃতীয় আন্দোলনটি প্রথম দুটো থেকে চরিত্রগতভাবে আলাদা। কারণ এটি ছিল সামরিক ক্যু। অবশ্য এই অন্দোলনেরও জনসংশ্লিষ্টতা ছিল। এটি ১৮৮১ সালে একবার উচ্ছেদ হওয়া মিশরের রাজ পরিবারের চূড়ান্ত পতন ঘটায় এবং মিশর থেকে বৃটিশ বিতাড়নের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়।

রাষ্ট্রস্বীকৃত এই তিনটি আন্দোলন ছাড়াও মিশরীয়রা তাদের শাসকদের দুর্নীতি, লোভ আর নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে গত ৬০ বছরে অনেক বিদ্রোহ করেছে। ১৯৬৮ সালে ছাত্ররা নাসেরের পুলিশী রাষ্ট্রের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে সাহসী এবং ব্যাপক আন্দোলন ঘটিয়েছিল। ১৯৭০এ ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সাদাতের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে এবং সরকারকে বাধ্য করেছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক যুদ্ধ পুনর্বহাল করতে।

১৯৭৭ সালের ১৮১৯ জানুয়ারি মিশরীয়রা আনোয়ার সাদাতের দুর্নীতিগ্রস্থ, অযোগ্য এবং নিষ্ঠুর সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আইএমএফএর অর্থনৈতিক নীতিপদ্ধতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এবং সেনাবাহিনী পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট তার জেটপ্লেনে করে নির্বাসনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।

১৯৯০এর দশকের শুরুতে হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে ইসলামী বিপ্লবগুলো সশস্ত্র রূপ নেয়। এগুলো ছড়িয়ে পড়ে কায়রোর বস্তিতে বস্তিতে এবং সাইদ মিশরবা ‘আপার ইজিপ্ট’-এ। এই বিপ্লবগুলো দমনের সময় নিহত হয় শত শত সাধারণ মানুষ, ইসলামী বিপ্লবী এবং সৈন্য।

বিপ্লবের এই তালিকায় প্রথম ভূমধ্যসাগরীয় যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখল, ইসরায়ালের লেবানন এবং গাজা আক্রমণের সময়কার ব্যাপক জনপ্রতিরোধের উল্লেখ করিনি। তারপরও তালিকাটা নেহায়েত ছোট না; ১৩০ বছরের ইতিহাসে কম করে হলেও দশটি উল্লেখযোগ্য গণআন্দোলন। দুর্ভাগ্যের কারণে কাঁধে চেপে বসা উপনিবেশিক কিংবা উত্তরউপনিবেশিক ব্যর্থ রাষ্ট্রব্যবস্থা আধুনিক মিশরীয়রা কখনোই চুপচাপ মেনে নেয়নি।

এই আন্দোলনগুলোর অনেকগুলোরই নিজ নিজ কবি ছিল। ১৮৮১র বিপ্লব পেয়েছিল মাহমুদ সামি আলবারৌদির নিওক্লাসিক্যাল ক্কাসিদা। ১৯১৯এ ছিল বায়রাম আলতুনসির লোকায়ত যাজাল। সালাহ জাহিন ১৯৫২এর আন্দোলনের অন্যতম মূখ্য লোককবি ছিলেন। তার দেশপ্রেমধর্মী কবিতাগুলো নিয়ে বিখ্যাত আরব কণ্ঠশিল্পী আবদেল হালিম হাফেজ গান তৈরি করেন। ফুয়াদ হাদ্দাদের মাওয়ালগুলোও এই সময়েই লেখা হয় এবং এগুলো আজও গাওয়া হয়ে থাকে। ১৯৭০এর দশক থেকে চলছে ফাওয়াদ নেগমের কাল। তিনি মিশরের সেনাবিরোধী আন্দোলনগুলোয় নেতৃস্থানীয় গীতিকার হিসাবে ভূমিকা রেখেছেন। ৪০ বছর ধরে নেগমের কবিতা—যার অনেকগুলোতেই শেখ ইমাম সুর দিয়েছেন—মিশরের ছাত্র, শ্রমিক এবং নিম্নবর্গের বিপ্লবীদের তড়িতায়িত করে এসেছে। নেগমের কবিতায় আছে সাধারণ মিশরীয়দের সাহসের প্রশংসা। আরো আছে মিশরীয় প্রভুদের প্রতি খেদ, বক্রোক্তি। এ বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিপ্লবের প্রথম দিন থেকে বামপন্থী কর্মীরা, যারা এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের গলায় যে নেগমের গান শোনা গেছে—এ কোনো কাকতাল নয়। এই কবিদের পাশাপাশি আমরা বলতে পারি নাগিব সুরুর, আবদ আলরাহমান আলআবনৌদি, তামিম বারঘৌতিদের কথা। এরা সবাই নিজ নিজ উপায়ে সাহিত্যরাজনৈতিকতার এই ঐতিহ্যে ভূমিকা রেখেছেন।

এই স্বীকৃত কবিরা ছাড়াও ছিলেন হাজারো কবি—যাদের সবাই কর্মী—যারা ছন্দোময় বুদ্ধিদীপ্ত শ্লোগানের অস্ত্র ছাড়া কখনই জনসমক্ষে প্রতিবাদ দেখানোর সাহস করতেন না। সাম্প্রতিক মিশরীয় বিপ্লবের ঐতিহাসিকরা, যেমন আসাদ আবু খলিল ইতিমধ্যে এই শ্লোগানকাপলেটগুলোর তালিকা তৈরি শুরু করেছেন। এটা নিশ্চিত, তালিকায় কয়েকশ কাপলেট থাকবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কাপলেটগুলো তৈরি হয়েছে কথ্যভঙ্গিতে, ক্লাসিক্যাল ভঙ্গিতে নয়। এগুলো খুবই আকর্ষক এবং খুব সহজেই এগুলোর সঙ্গে গলা মেলানো যায়। এগুলো হাস্যরসে ভরা এবং পরিহাসপ্রবণও। এগুলো আমাদের এই কথাই মনে করিয়ে দেয় যে বিপ্লব মানে উৎসব এবং প্রাণখোলা হাসিও।


কবিতা কীভাবে কাজ করে

এই বিপ্লবের কবিতাকে কেবল টেক্সট হিসাবে দেখার উপায় নেই, যে টেক্সট পড়া যায় এবং শব্দে অনুবাদ করে নেওয়া যায়। কবিতা এখানে একটি ক্রিয়া। এই ক্রিয়া কবিতারই ভিতরে এবং কবিতাকে নিয়েই। অন্য যেকোনো মাধ্যম হয়তো বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ আর অনুপ্রেরণাকে সংবহন করতে পারত। কিন্ত বিক্ষোভকারীরা যে কাপলেট-শ্লোগানগুলোয় মুখর হয়েছিল সেগুলো অভিযোগ এবং প্রেরণা প্রকাশের চাইতেও আরো বেশি কিছু করে। অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয় এমন কিছু বার্তা এই কবিতাগুলো ধারণ করতে পারে। তাই দাবিগুলোকে এরা আরো তীক্ষ্ণ করে তোলে।

তাহরির চত্বরে হাজারো মানুষ যে শ্লোগানটি সবচেয়ে বেশিবার গেয়েছিল তার কথাই ধরুন : ‘ইশশাআব/ইউরিদ/ইসক্কাত/ইননিযাম’। এর বাংলা অনুবাদ হতে পারে : ‘মানুষ এই শাসনের পতন চায়। কিন্তু এই সরল এবং জটিল, ছোট্ট কাপলেটটার যে শক্তি তার কোনো অনুবাদ সম্ভব?

এটা কেন কেন্দ্রীয় শ্লোগান হয়ে উঠল তার সত্যিকারের কাব্যিক কারণ আছে। যেমন, অন্যান্য সরস কিংবা তিক্ত পরিহাসময় শ্লোগানগুলোর তুলনায় এই শ্লোগানটি অনেক সোজাসাপ্টা আর পরিষ্কার। এই শ্লোগানটা কথ্য মিশরীয় এবং প্রমিত আরবি—দুই ভাষার উপরেই দাঁড়ানো। এই অন্দোলনের বিশালাকার আরব দর্শকশ্রোতা এটিকে খুব সহজেই বুঝে নিতে পারে। পাশাপাশি অন্যান্য কাপলেট শ্লোগানগুলোর মতো এটারও নির্দিষ্ট মাত্রা এবং দ্যোতনার ধরন আছে। এর ওঠানামাটা এমন : হ্রস্বদীর্ঘ, হ্রস্বদীর্ঘ, হ্রস্বদীর্ঘ, হ্রস্বহ্রস্বদীর্ঘ। যদিও অন্য শ্লোগানগুলোর মতো এটি অন্ত্যমিলসমৃদ্ধ নয়, তারপরও হাজার হাজার মানুষ একই সঙ্গে তাল বজায় রেখে এটি গাইতে পারে। এই শ্লোগানের সফলতার পিছনে এটি একটি অন্যতম কারণ সম্ভবত।

এই বিপ্লবের ছন্দোময়তা এটাই প্রমাণ করে—নিরেট ভাষাগত শুদ্ধ অর্থ তৈরি করা ছাড়াও এই কাপলেটশ্লোগানগুলোর আরো কাজ আছে। এর মধ্যে একটা হলো, স্বজাতীয়দের বিশাল সমাবেশের সঙ্গে গলা মেলানোর ফলে একটি সুনির্দিষ্ট জাতিত্ববোধ তৈরি হওয়া। এই জাতিত্ববোধ অনুভব করা যায়, অনেকটা নিজের গলাতেই। এর আগে কখনই এই বোধের অস্তিত্ব ছিল না।

সমষ্টিগত এবং ইতিবাচক বিশ্বাস দিয়ে গড়া একটি আন্দোলনের অংশ হিসাবে নিজেকে ভাবতে পারাটা ব্যক্তির জন্য অনেক বড় ব্যাপার। বিশেষ করে আন্দোলনটা যদি হয় এমন একটা শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যে শাসনব্যবস্থা সমস্ত প্রতিরোধের মানসিক শক্তিকে চুরমার করতে সিদ্ধহস্ত।

দীর্ঘদিন ধরে সমীহ পেয়ে আসা নেতার সম্বন্ধে বিদ্রূপাত্মক শ্লোগানে গলা মেলানোর একটা তাৎক্ষণিক প্রভাব আছে। এটা কোনো ভাষা দিয়েই বোঝানো যাবে না। শোষককে নিয়ে হাসতে শেখা হলো ভয় ভুলতে শেখার প্রথম ধাপ। এই বিপ্লবের স্বাক্ষীরাও একই কথা বলেছেন। বিপ্লবের প্রথম মুহূর্তগুলোতে বিদ্রূপময় শ্লোগান যতই তীব্র হচ্ছিল, প্রতিবাদকারীরা ততই তাদের ভয় ভুলছিল।

এবং ভয় একবার ভুলতে পারার পর মিশরীয়রা রাস্তা থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই আর দেখায়নি। মোবারকের সরকার যত বেশি সহিংস হয়ে উঠেছে, এই কাপলেটশ্লোগানের আবৃত্তি ততই উচ্চকিত হয়েছে। যেন এগুলো বারবার জপ করলে নিজেদের আসল দাবিগুলোর প্রতি আরো জোরদারভাবে মনোনিবেশ করা সম্ভব।


কবিতা ও তাৎক্ষণিকতা

যিনিই মিছিলে কোনোদিন শ্লোগান দিয়েছেন, কোনো না কোনো এক পর্যায়ে একবারের জন্য হলেও তিনি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছেন—কেন আমি এটা করছি? এই প্রশ্নটা আসলে একটা বিব্রতবোধ থেকেই আসে। শ্লোগানের এই ভঙ্গি কি ফাঁপা, শক্তিহীন? মনে যেন এই সন্দেহই তৈরি হয়। কোনো কাজ শুরু করার আগে যে দুশ্চিন্তা হয় (পারফরমেন্স অ্যাংজাইটি), সেটাই এই নার্ভাসনেসের কারণ। এবং এই ব্যাপারটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শ্লোগান দেওয়ার প্রথা কেন আবিষ্কৃত হয়েছিল। শ্লোগানের উদ্ভব হয়েছিল, কারণ একটা কিছু ঘটানোর এর ক্ষমতা আছে।

দার্শনিকরা যখন ‘শব্দ দিয়ে কাজ করা’-র কথা বলেন, তারা সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেন যে শাব্দিক ক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করে কোথায় এটা ঘটছে তার উপর। এর মানে হলো, যেকোনো ভাষিকক্রিয়াই (স্পিচ অ্যাক্ট) অনিশ্চয়তায় ভরা। নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতেই তা সাফল্য পায়। তারপরও, সাফল্য যে আসবেই এমন কোনো কথা নেই। সাফল্য আসেই যদি, তা এর ক্রিয়াশীলতার মধ্য দিয়েই আসে।

২৫ জানুয়ারি থেকে মিশরীয়রা বিপ্লবের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝঁাপ দিয়েছিল। এরপর তারা অনেক বাধা পেরিয়েছে। প্রতিবারই সাফল্যের কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই তারা ক্রিয়াশীল থেকেছে। এটাই, আমার ধারণা, তাদের অভাবিত সাহসের মূল কারণ। কোনো পর্যায়েই বলার উপায় ছিল না যে পুরো জয় ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে তারা।

যারা নিজেরাই নিজেদের ইতিহাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, কেবল পাণ্ডুলিপি লেখা আর মঞ্চ বানালেই তাদের চলে না, সেই মঞ্চে নতুন চরিত্রে তাদের অভিনয়ও করতে হয়। এবং তা করতে হয় এমন শক্তি আর সাহসের সমন্বয়ে যে তীব্র সহিংসার সামনেও তাদের যৌথকণ্ঠ ছন্দ ধরে রাখতে পারে। রাস্তার কবিতা আসলে আরেক ধরনের লেখা। জয় এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতির কোনো ভরসা ছাড়াই এটি ইতিহাসের পাণ্ডুলিপির নতুন খসড়া তৈরি করে। এখনই এবং এখানেই।

 

অনুবাদ : তানিম হুমায়ুন

Posted in এলিয়ট কোলা, তানিম হুমায়ুন | Tagged , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

দৃশ্য/ পিয়াস মজিদ

দৃশ্য
পিয়াস মজিদ

একটা নদী আমাকে দ্বিধাবিভক্ত করে
তিনটা শিয়াল সেটা দেখে
এবং ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা



Posted in পিয়াস মজিদ | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

মায়া অথবা তবুও মায়া রহিয়া গেল/ তৌহিদুল ইসলাম

মায়া অথবা তবুও মায়া রহিয়া গেল

তৌহিদুল ইসলাম

তোমাকে পরিত্যাগ করার পূর্বে বলে রাখি
আমার ভিতরে সদাই তোমার উপস্থিতি
আলাদা সত্তার আকারে প্রতিবিম্ব দিয়েছে নিখুঁত,
সেই প্রতিবিম্বকে সত্য ভেবে কখনো তুলে নিতে গিয়েছি
কখনো নিজেকে বদলে নিয়েছি অই প্রতিবিম্বের সাথে
কিন্তু সত্যিই এখন আর তোমাকে আমার দরকার নেই,
তোমার উপস্থিতি এখন আমাকে খণ্ডিত করে
আমি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ি, নির্দিষ্ট কোনো
বিন্দুতে মনোযোগ দিতে না পেরে আমি তাজ্জব
বনে গিয়ে দেখি তোমার ফেনিল উত্‍সব,
আমি মোহিত হয়ে যাই কিন্তু সত্যিই মোহ
কেটে গেলে পর বিরক্তি আর বিবমিষায় আক্রান্ত হই।
আমার চোখের পাপড়ি ব্লেড দিয়ে কেটে নিয়েছো তুমি
কথা বলার সময় জিহ্বায় ছড়িয়ে দিয়েছো বালি,
আপন রক্তের থেকে সরিয়ে দিয়েছো দূরে
অন্য কারো মত হয়ে উঠবার প্রচেষ্টায় ইন্ধন যুগিয়ে
তামাশা পেয়েছো, বলিনি কিছুই, কারণ
তখনো শেষ দৃশ্যের আগে ইঙ্গিতেই বুঝে নিতে চাই নি
বাস্তবতার বিভিন্ন স্তরে তোমার বিভিন্ন রূপের পিছনে

সত্যিই কোন সারবস্তু নেই। আমি সর্বদাই
তোমাকে সশরীরে হাজির দেখতে চেয়েছি,
বইয়ের পৃষ্ঠায় লিখিত ভাষায় অথবা টিভিস্ক্রিনে নয়,
অথচ এখন আমি তোমাকে পরিত্যাগ করছি—
আমার ভিতরে রয়ে যাবে তোমার উপস্থিতির স্মারক
আমার ভেদজ্ঞানের ভিতরে তোমার অভেদ
আমার অভেদে তোমার ভেদাভেদগুলি,
মুহূর্তের মীমাংসায় তাহাদের তত্‍পরতা
নিশ্চই তোমার কথা স্মরণে আনবে
এখন এই মুহূর্তের সংকল্পের পিছনেও যেমন
তোমার নীরব উপস্থিতি আমার ইচ্ছার ঘোড়া।
এইভাবে শূন্য থেকে বার বার তোমাকে স্মরণ করে নেবো
এইবেলা তোমাকে পরিত্যাগ করতে তাই বাঁধা নেই কোনো,
আমিই তোমাকে সৃষ্টি করেছি আর তুমি গড়ে তুলেছো আমাকে
এখন তোমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, কোন মায়া জমে নেই
জলের কিনারে এই দ্যাখো পৌঁছে যাচ্ছে শেষতম ঢেউ।

Posted in তৌহিদুল ইসলাম | Tagged , , , | 3 টি মন্তব্য

গান/তারিক টুকু

গান

তারিক টুকু

 

গান শুনি, কাঠপুষ্প ঝরে।

আলোকে উজ্জ্বলভাবে অন্ধ করে যায়, তার ফণা
উতলা মীড়ের মত দোলে আর ফিরে ফিরে আসে,
কার কাছে!
অস্থির রেণুর মত সে কি তবে ছড়ায় বাতাসে।

যে তোমার ভাষা বোঝে, সমস্ত অন্যায় –
তীব্র জ্বলজ্বল ঐ নক্ষত্রমণ্ডলে ছাপ ফেলে
কী যে বলে!
বুঝি ভাষার অভাবে সেই সন্ধিক্ষণ চিরমূর্ছা যায় ।

Posted in তারিক টুকু | Tagged , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

সেপ্টেম্বর ১৭/ রুহিনা ফেরদৌস

সেপ্টেম্বর ১৭

রুহিনা ফেরদৌস

দিন পড়ে আছে-
এক টুকরো পথ যেন
চলাচলহীন স্বভাবের

পাতা ঝরছে
ঝরে পরিনি কি আমিও-
এবং
এবং
এবং – বৃষ্টির পর
রংহীন সমস্ত ভেজা বৃক্ষগুলি
প্রতুৎত্তরে বলেছে-
পাড়ি দিয়ে সমস্ত নদী
সাগরে যাবার পর
সৈকতে কেন ডানা ভেঙে পরে ছিল
কয়েকটি বাতাস- তার উত্তর

কিভাবে পাহাড় হওয়া যায়

Posted in রুহিনা ফেরদৌস | ১ টি মন্তব্য

বিপরীত পদাবলী/ ইফতেখার ইনান

বিপরীত পদাবলী

ইফতেখার ইনান

তার মতো করে বলি- দূরে যাও সোনালী ঝিনুক।

বিপরীত পদাবলী, সে তোমার চোখ না চিনুক

চোখের ভিতর থাক সূর্যোদয়গোপন স্বভাব

ভুল ঠিকানার ডাক ফিরে এলে না পাওয়া জবাব

কিছু অদেখা অক্ষরে ছড়ায় পড়ে কি যথাতথা?

জেনো, গভীর স্নানের পরে ম্লান হয় সকল মুগ্ধতা…

Posted in ইফতেখার ইনান | Tagged , , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

ধান ক্ষেতের সমুদ্র/ পদ্ম

ধান ক্ষেতের সমুদ্র

পদ্ম

ছোট ছোট মানুষেরা সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচে
যেমন অজস্র ঘাস জেগে আছে নিজের ভেতর

মাঠ ভরা ছোট ছোট গ্রাম ভেসে ভেসে নিখোঁজ সে’ই কবে!
নোনা পানি ঢুকে গেছে ঘরে
নিভুনিভু আমলকি গাছটার কাছে বারবার
প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে ফড়িংয়ের দল মুছে গেছে

তুমি কি নিজের চেয়ে বড় নও!
সাগরে বেঁধেছো ঘর
আমাকে ডাকোনি

 

Posted in পদ্ম | Tagged , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

উদ্ধত সৈয়দের জন্য শোকগাথা/ শিমুল সালাহউদ্দিন

উদ্ধত সৈয়দের জন্য শোকগাথা

শিমুল সালাহউদ্দিন

ভেসেছে উদ্ধত প্রেরণার গান কালস্রোতে

কী দারুণ নিদারুণ হেসে অন্ধ কবিতার গোছা

নীরবতা গভীরতা হয়ে শুয়ে আছে আজ

উত্তর-দক্ষিণে পাথর নিথর শুইয়ে দেবার আগে

পালাতে পালাতে আমলা-কেরানি-ঊনসাহিত্যিক ভিড়ে

মনে মনে শুধু তোমাকে প্রণাম জানাই মান্নান ভাই

শবযাত্রায় আমাদের মাথার ওপরে ঠাঁই নিয়ে

আকাশের সাথে প্রগত-সমান্তরাল শুয়ে

বস্তুর বিরুদ্ধে দিলে অফুরান উড়িয়ে প্রজাপতি

আরো কত ভালোবাসা বাকি ছিল হায় জানে কি যযাতি

জীবনের গূঢ় রহস্যের এই যেন প্রথম আশ্চর্য প্রকাশ

কবি, শবযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে

আমার কেবল মনে পড়ছে ঠা ঠা হেসে দিয়ে

বললেন আপনি, কোনো বিচ্ছেদই বিচ্ছেদ নয় শিমুল…

Posted in শিমুল সালাহউদ্দিন | Tagged , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান